December 22, 2024, 7:53 am
শুভব্রত আমান/
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সাহিত্যে সত্য ও সুন্দরের দর্শন চর্চা করেছেন। তাঁর রচিত আমার সোনার বাংলা গানটি এই সত্য ও সুন্দরের প্রতিচ্ছবি ; এটা বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।
তিনি আজ (রোববার) কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্ম বার্ষিকীর জাতিয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। কুঠিবাড়িতে জাতিয়ভাবে তিনদিনের কর্মসূচী উদ্ধোধন কালে সেখানে আসতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালেদ।
স্পিকার বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গঠনের সাথে রবীন্দ্রনাথের এই সত্য-সুন্দরের দর্শনের মিল রয়েছে।
তিনি তুলে ধরেন রবীন্দ্রনাথ এই বাংলাকে ভালবেসে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি রচনা করে গেছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক দর্শনে এ গানটিকেই তুলে এনে স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে ব্রতী হয়েছিলেন।
তিনি তরুণ প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথের সত্য-সুন্দরের দর্শনকে ধারন করে স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে ব্রতী হতে আহবান জানান ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব আবুল মনসুর, স্মারক বক্তৃতা করেন প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
দুই বছরের অনির্ধারিত ও দুই বছর করোনার কারনে বন্ধ থাকার পর এবার এই কুঠিবাড়িতে তিনদিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়। অনুষ্ঠানে আলোচনাসভা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, নাটক নিয়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। জাতিয় পর্যায় থেকে অনেক রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীও গান পরিবেশন করেন প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে।
বিশ^কবির স্মৃতিধন্য এই কুঠিবাড়িতে ঈদ পরবর্তী এই তিনদিনের উৎসব ইতোমধ্যে রবীন্দ্রপ্রেমীদের মধ্যে উচ্ছাস তৈরি করেছে। বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে ভারত সরকারের সদ্য নির্মিত ১ একর বাগানের মাঝে দুটি দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যেখানে রয়েছে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার, একটি গ্রন্থাগার, একটি সংগ্রহশালা, পর্যটকদের জন্য একটি ৪০ কক্ষের থাকার ব্যবস্থা এবং একটি দ্বিতল ক্যাফেটেরিয়া।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত ঐতিহাসিক বাড়িটিই রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি বা শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি নামে পরিচিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে দুরত্ব ১৫ কিমি। সমগ্র কুঠিবাড়ি এলাকা প্রায় ৩৩ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় আড়াই বিঘা জমির উপর। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে ১৮৬২ সালে নির্মিত এই বাড়িটির নিচতলায় ৯টি, দোতলায় ৭টি, তিনতলায় ২টি কক্ষসহ মোট ১৮টি কক্ষে ৮৩টি জানালা ও ১৮টি দরজা রয়েছে। কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত আসবাবপত্র আছে। আছে সেই সময়ের দুর্লভ ছবি, পালকি, পালঙ্ক। রয়েছে একটি পুকুর, কবি যে পুকুরপাড়ে বসে কবিতা লিখতেন, সেখানে আছে সেই সময়ের লাগানো বকুলগাছ। এ পুকুরেই রয়েছে রবিঠাকুর যে নৌকায় চড়ে পদ্মায় ঘুরতেন, সেই নৌকার একটি রেপ্লিকা।
১৮০৭ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলের জমিদারী লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৯ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ অনিয়মিত বিরতিতে এই বাড়িতে আসতেন। কখনো একা, কখনো পরিবার নিয়ে এবং জমিদারীর কাজ পরিচালনা করতেন।
এই কুঠিবাড়ি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মে অশেষ প্রভাব ফেলে আছে। এই বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’র একটি বড় অংশসহ বহু কালজয়ী লেখা লিখেছিলেন। বাড়িটি ১৯৬১ সাল থেকে সরকারের প্রতœতাত্বিক বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত।
Leave a Reply